হায়ারিংএ ভোগান্তি কেন হয়? এর সমাধান কী? 

যাই বলেন, অনেক প্রতিষ্ঠানই বিশেষ করে নতুন প্রতিষ্ঠান হায়ারিং বিষয়টাকে হালকাভাবে নিয়ে থাকে। ইন্ডাস্ট্রিভেদে এই হালকা ভাবে নেয়ার প্রাকটিস অনেক প্রতিষ্ঠানে চলতেই থাকে। আবার অনেকেই কয়েকবছর পর বুঝতে পারেন যে, বিষয়টাকে হালকাভাবে নেয়াটা বিরাট বোকামি হয়েছে। 

অনেকেই হায়ারিং বিষয়টাকে হালকাভাবে নিয়ে নিজে নিজে বা নিজেরা নিজেরাই হারারিং করে থাকেন। ইনডিভিজুয়াল সিইও না হয়ে এই ক্ষেত্রে কালেকটিভ সিইও হয়ে থাকে। আচ্ছা সিইও মানে বুঝিয়েছি- চিপ এভরিথিং অফিসার, নিজেই বা নিজেরাই সবকিছু করতে চাওয়ার প্রবণতা। 

দেখুন হায়ারিং একটা জটিল টার্ম। একটু কাগজ কলম নিয়ে হিসেব করে দেখুন এখানে আপনাকে কী কী ধরণের ব্যয় ও ঝুঁকি বহন করতে হয়। 

১. প্রথমেই আপনাকে লিডস সংগ্রহ করতে হয়। এই সংগ্রহের কাজ বিভিন্ন সোর্স থেকে হতে পারে। এরমধ্যে অনেকগুলো সোর্স ব্যয়বহুল। ম্যাসিভ লিডস আসলে তা আবার এক বা একাধিক ব্যক্তি মিলে যথেষ্ট সময় দিয়ে, অভিজ্ঞতা ও মেধা কাজে লাগিয়ে শর্টলিস্ট করতে হয়। 

২. লিডসের সাথে যোগাযোগ করতে হয়। একাধিকবারও যোগাযোগের দরকার হতে পারে পরের ধাপে যেতে হলে। এরজন্য একজন দায়িত্বে থাকতে হয়, এটার মাথাব্যাথা নিতে হয় কাউকে না কাউকে। 

৩. লিখিত পরীক্ষা বা সাক্ষাৎকারে যুক্ত করতে হয়। এই ধাপটা আরও কঠিন! এই ধাপে ম্যানেজমেন্ট লেভেল থেকে একাধিক ব্যক্তিকে যুক্ত করতে হয়, অন্তত ফর্মালিটির জন্য হলেও। এবং এখান থেকেই চুড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হবার প্রায় সমস্ত উপাদান খুঁজে নিতে পারতে হয়। 

৪. উপরোক্ত তিনটি ধাপে উত্তীর্ণ লিডসকে নিয়োগ দেয়া হয় এবং ফ্রেশার হোক আর অভিজ্ঞ হোক, কাজ বুঝে নেয়ার জন্য স্ট্যাটাস ভেদে কিছুটা সময় দিতে হয়। 

এই যে ধাপগুলো বললাম, এগুলো একেবারে মিনিমাম ধাপ। একটু স্ট্রাকচারড প্রতিষ্ঠানে এরচেয়ে বেশি ধাপ অনুসরণ করা হয় হায়ারিং করতে। 

এখন চিন্তা করেন, এই প্রক্রিয়াতে প্রতিটি ধাপেই আপনার প্রতিষ্ঠানের যতগুলো মানুষ সময় দিয়েছেন, সবাই কিন্তু পেইড পারসন। সবাইকে তাদের ব্যয় করা সময়ের জন্য আপনাকে পে করতে হয়েছে। সময় ও অর্থ দুই-ই গিয়েছে। এমনকি যাকে হায়ার করেছেন তাকে কাজ বুঝে নেয়ার জন্য যে সময়টা দিয়েছেন সেটুকুর জন্যেও আপনাকে পে করতে হয়, আউটপুট জিরো হলেও। 

এবার খেয়াল করেন, নিয়োগের এক সপ্তাহ বা একমাস পরেই টের পেলেন যে, ভুল ব্যক্তিকে নিয়োগ দিয়েছেন, একে দিয়ে আপনার প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যের ধারেকাছেও যেতে পারবেন না। প্রথমেই কাগজ কলম নিতে বলেছিলাম, এবার হিসেব করেন এই ভুলের মূল্য কতটাকা, কতঘন্টা? 

এই কারণেই হিউম্যান রিসোর্স বা এইচ আর এতটা গুরুত্বপূর্ণ। একজন দক্ষ এইচ আর এই কাজগুলোর জন্যই মূলত বিশেষজ্ঞ। 

তারমানে এইচআর হায়ারিং প্রসেস ডিল করলে আর কোন সমস্যা থাকবে না, নাকে তেল দিয়ে ঘুমানো যাবে? 

না! 

চাকরি করলে পজিশনভেদে জবটাইমের পরে আপনি ঘুমিয়ে হয়তো কাটাতে পারেন, কিন্তু বিজনেস করতে গেলে যদি আপনি সিস্টেম ডেভেলপ করতে না পারেন তাহলে আপনার ঘুম নেই। 

এইচআর কর্মীকে তো আপনাকে হায়ার করতে হবে, তাই না! তো সেই ক্ষেত্রে আপনি কার হেল্প নিবেন। ঠিক এই জায়গাতে যদি আপনি মুন্সিয়ানা দেখাতে পারেন নিজেকে, তাহলে আপনি বস, রিয়েল সিইও- চিপ এক্সিকিউটিভ অফিসার। 

এইচআর ছাড়া কি তাহলে প্রতিষ্ঠান চলবে না? 

চলবে তো! ঐযে এইচআরে সঠিক ব্যক্তিকে হায়ার করতে পারার ক্যাপাসিটি যদি আপনার থাকে, তাহলে এইচআর ছাড়াও আপনার প্রতিষ্ঠান চলবে। তবে একটি প্রতিষ্ঠানের একটি লক্ষ্য থাকা উচিৎ। সেই লক্ষ্য অনেক উঁচু হওয়া উচিৎ। উঁচু লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে দুটো কাজ করতে হবে। ১. কাজের প্রতিটি বিভাগ বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে; এবং ২. সিস্টেম ডেভেলপ করতে হবে। 

একজন উদ্যোক্তাকে মনেপ্রাণে উদ্যোক্তা হতে হয়। চাকরিতে আপনি ভালো না করলে হয় আপনাকে স্যাক করা হবে অথবা আপনি নিজেই ছেড়ে দিবেন। কিন্তু উদ্যোক্তার এসব অপশন নেই। সামনে এগোতেই হবে, এবং সঠিকভাবে, মনযোগী হয়েই এগোতে হবে। এখানে অমনোযোগী ইকুয়াল টু ফেইলিওর। নোট করে রাখেন। 

এত মনযোগী হয়ে কী হবে?

একজন উদ্যোক্তা হওয়ার সিদ্ধান্ত যেদিন নিয়েছিলেন, সেদিন থেকেই তো আপনাকে একটা ডায়েরি ধরিয়ে দিয়েছিলাম। নিশ্চয় সেই ডায়েরিতে আপনার শুরুর দিন থেকে প্রতিটি সাফল্য যেমন লেখা থাকবে, তার চেয়ে আরও সবিস্তারে লেখা থাকবে প্রতিটি ব্যর্থতার ব্যাপক বিশ্লেষণ, কারণ, সম্ভাব্য সমাধান। জাস্ট এই প্রাকটিস যদি আপনার থাকে তাহলে হায়ারিং নিয়ে আপনাকে কোনদিন ভুগতে হবেনা।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *