দুই সতীনের গল্প জানেন? 

Dui Shotiner Golpo

দুই সতীনের গল্প জানেন? 

এই গল্পে লুকিয়ে আছে এক নির্মম সত্য। নিজের অজান্তেই কীভাবে একজন মানুষ পঙ্গু হয়ে যেতে পারে সেই সত্য জানা যায় এই গল্প থেকে। চলুন জানা যাক। 

 

এক গ্রামে ছিলো দুই সতীন। তাদের সম্পর্ক ছিলো সাপে নেউলে। এমন একটি দিন ছিলো না, যেদিন তাদের গ্যাঞ্জাম লাগতো না। 

একদিন হঠাৎ বড় সতীন মারা গেলো। রেখে গেলো তার একমাত্র সন্তান; এখনও শিশু। একেতো সৎ মা, তার উপর মায়ের শত্রু; ওর জীবনে কী বিভীষিকা অপেক্ষা করছে তার বুঝতে বাকি রইলো না আশপাশের প্রতিবেশিদের। সৎমায়ের অবহেলা আর নির্যাতনেই হয়তো বাচ্চাটার জীবন যাবে। 

 

কিন্তু সবার ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করে ছোট সতীন শিশুটিকে এতটাই আদর যত্ন দিয়ে লালন পালন করতে লাগলো যে, ওর নিজের মাও এতটা আদর যত্ন কখনও করে নি। নিজের হাতে খাইয়ে দেয়া, গোসল করিয়ে দেয়া, ঘুম পাড়ানো থেকে শুরু করে সবরকম যত্নে কমতি রাখতো না ছোট সতীন।

 

একদিন এক প্রতিবেশি বিকেল বেলায় ছোট সতীনের কাছে এসে গল্প করতে করতে তার বিস্ময় প্রকাশ করলো। বললো- তুমি এত ভালো তা আমরা আগে বুঝিনি, আমরা ভেবেছিলাম বাচ্চাটার জীবন বুঝি এবার তোমার অত্যাচারেই শেষ হবে। তার মায়ের সাথে তোমার যে শত্রুতা ছিলো তাতে এমন ভাবনা আসাটাই স্বাভাবিক। 

প্রতিবেশির এমন কথা শুনে ছোট সতীন মুচকি হাসলো। বললো- শোনো, তোমরা চোখে যা দেখছো তার পেছনে অন্য গল্প আছে। আমার দুই ছেলে, ওদেরকে আমি সবসময় দৌড়ের উপর রাখি। যতকাজ ওদেরকে দিয়ে করাই। ওরা দক্ষ হয়েই বেড়ে উঠছে। জীবন সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করছে। ওরা কোথাও আটকাবে না। 

এই বাচ্চাটাকে আমি এতটাই আদর যত্ন দিয়ে বড়ো করবো যে, ও জীবনে বুঝবেই না, কষ্ট কী জিনিস, কাজ কী জিনিস। জীবনে কোনো কাজেই সে কোনদিন দক্ষ হবে না, কোন জ্ঞান সে লাভ করবে না। নিজের হাতে খাবার কীভাবে খেতে হয়, সেটা পর্যন্ত সে জানে না, জানবেও না। ওর সবকিছুই আমি করে দিই। আরেকটু বড় হলে ওর জন্য চাকর রেখে দিবো। এবং একদিন ওকে আমি ছুড়ে ফেলে দিবো। সেদিন ও নতুন জীবন দেখবে, কিন্তু কিছুই করতে পারবেন না, ভিক্ষা করতে হয় কীভাবে তাও জানবে না, ও হবে জ্ঞানে ও দক্ষতায় পঙ্গু। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরবে, ধুঁকে ধুঁকে শেষ হয়ে যাবে। 

এটাই হবে ওর মায়ের প্রতি আমার প্রতিশোধ। 

 

এই হচ্ছে গল্প। এবার চলুন আমরা নিজেদের জীবনের সাথে রিলেইট করি গল্পটা। 

ধরুন, আপনি স্টুডেন্ট, হোমওয়ার্ক করেন না, কিন্তু বন্ধুর করা হোমওয়ার্ক টুকে নিয়ে ক্লাসে যান। কোন ঝামেলা হয় না। নিয়মিত এই কাজ করছেন। আপনার বন্ধুও ঠিকই আপনাকে হেল্প করছে। 

কিংবা অফিসে আপনাকে দেয়া কাজ কাজগুলো ছলেবলে কলে কৌশলে কলিগকে দিয়ে নিয়মিত করিয়ে নিচ্ছেন, মাসের পর মাস এভাবেই চলছে। ভালোই চলছে। 

হয়তো, আপনার বন্ধু এবং কলিগের মনে কোন দুরভিসন্ধি নেই, কিন্তু প্রতিদিন আপনার নিজের দক্ষতায় যে ধার দেয়ার কথা ছিলো সেটা তো দিলেন না। এই বন্ধু ও কলিগতো নিজের দক্ষতায় প্রতিদিন ধার দিচ্ছে, ওরাতো একদিন ঠিকই আরও বেটার অবস্থানে চলে যাবে, আপনি একা হয়ে যাবেন, কী করবেন তখন? 

 

আমাদের জীবনে, সব আরামই আরাম নয়। সব খাবার যেমন খাবার হয় না, কোনো কোনো খাবার বিষ হয়ে দাড়ায়, তেমনই কিছু কিছু আরাম আমাদের জন্য পঙ্গুত্বের কারণ হয়ে দাড়ায়। ইন্টেলেকচুয়ালি পঙ্গু হওয়া খুবই ভয়ানক ব্যাপার। 

এগুলো আমাদের অজান্তেই জীবনে চলে আসতে পারে। এজন্য যেকোনো আরাম করার আগে দশবার ভাবতে হয়। চেতনা জাগ্রত রাখতে হয়, কোনদিক থেকে কী আসছে তা খেয়াল রাখতে হয়। 

পরনির্ভরশীলতা একটি রাষ্ট্র, সংস্থা, সমাজ কিংবা মানুষ, সবার জন্যই অভিশাপ। 

 

#skill #skilldevelopment #salimhossain #selfhelp #expertise 

 

Scroll to Top