কয়েদি থেকে মন্ত্রী

হযরত ইউসূফ আঃ

হযরত ইউসূফ আঃ জেলে ছিলেন, পরে মুক্তি পেয়ে রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেয়েছিলেন। তাঁর জীবন নানাভাবে ঘটনাবহুল। 

তাঁর জেলে থাকা এবং মুক্তি পাওয়ার ঘটনা থেকে আমি চমৎকার একটা বিষয় শিখেছি। আপনাদের সাথে সেটা শেয়ার করবো এই লেখাতে। 

 

ঘটনাটা আগে জানা যাক- ইউসূফ আঃ ছিলেন জেলে, সেখানে আরও বন্দী ছিলো। দু’জন বন্দী একদিন এসে বললো- ইউসূফ, আমরা দু’জন দুটো স্বপ্ন দেখেছি, তুমি এর অর্থ করে দাও। আমরা তোমাকে বিশ্বাস করি। 

 

বলে রাখা ভালো, ইউসূফ আঃ স্বপ্নের নির্ভুল ব্যাখ্যা করার ব্যাপারে পারদর্শী ছিলেন। 

তো ইউসূফ আঃ বললেন- বলো কী স্বপ্ন, তোমাদের খাবার তোমাদের কাছে পৌঁছানোর আগেই আমি স্বপ্নের অর্থ বলে দিবো। 

বন্দিরা তাদের স্বপ্নগুলো জানালো। একজন স্বপ্ন দেখেছে- সে আঙ্গুরের রস বানাচ্ছে; অন্যজন দেখেছে- তার মাথার উপর রুটি, সেটা পাখি ঠুকরে খেয়ে নিচ্ছে। 

ইউসূফ আঃ প্রথমজনকে বললেন- তুমি খুব শীঘ্রই তোমার মনিবকে শরাব পান করাবে, তুমি মুক্তি পাবে। মুক্তি পেয়ে তোমার মনিবের সাথে আমার বিষয়ে আলোচনা করবে। 

দ্বিতীয়জনকে বললেন- তোমার মাথায় শূল চড়ানো হবে, তোমার মৃত্যুদণ্ড হবে। 

 

প্রথমজন মুক্তি পেয়েছিলো, কিন্তু সে তার মনিবের সাথে ইউসূফ আঃ এর ব্যাপারে বলতে ভুলে গিয়েছিলো। 

 

একদিন মিশরের রাজদরবারে বাদশাহ আজিজ এসে বললেন তিনি একটি স্বপ্ন দেখেছেন। রাজসভাতে যারা আছেন তাঁরা কেউ সেই স্বপ্নের ব্যাখ্যা দিতে পারবেন কি না। 

বাদশাহ স্বপ্ন দেখেছেন- তরতাজা গাভীকে শীর্ণকায় গাভীরা খেয়ে ফেলছে এবং ৭টি সবুজ শীষ ও ৭ টি শুকিয়ে যাওয়া শীষ। 

সভায় উপস্থিত সভ্যরা বললেন- এতো আজব স্বপ্ন, এসবের অর্থ আমরা জানি না। 

এই সময় জেল থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত লোকটি সেখানে ছিলেন এবং ইউসূফ আঃ এর কথা তার মনে পড়ে গেলো। সে জেলে গিয়ে দেখা করে বাদশাহর স্বপ্নের কথা জানালো। 

ইউসূফ আঃ সেই স্বপ্নের ব্যখ্যাই শুধু দিলেন না, সমাধানও দিয়ে দিলেন। তিনি আঃ বললেন- আগামী কয়েকবছর ব্যাপক ফসল উৎপাদন হবে। এবং এর পরের কয়েকবছর ব্যাপক দুর্ভিক্ষ হবে। তোমাদের বাদশাহকে বলবে, তিনি যেন যতটুকু দরকার শুধুমাত্র ততটুকু শস্য ব্যবহার করে, বাকিটুকু সংরক্ষণ করেন। তাহলে সেটা দিয়ে মন্দ সময়ে কাজে লাগাতে পারবেন। 

 

বাদশাহ এই ব্যাখ্যা জেনে ইউসূফ আঃ কে কারাগার থেকে বের করে আনলেন এবং সম্ভাব্য সেই ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব তাঁকেই দিলেন। ইউসূফ আঃ হলেন মিশরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাজকীয় ব্যক্তি। 

 

ঘটনা এপর্যন্ত জানলেই আমাদের আজকের আলাপ বোঝা যাবে। 

 

এবার খেয়াল করুন। 

ইউসূফ আঃ ছিলেন কারাগের বন্দী। তিনি মুক্ত হলে কীসের মাধ্যমে? আপনি নিশ্চয় বলবেন স্বপ্নের ব্যাখ্যা করে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে হেল্প করেছেন এজন্য। আমি আপনাকে আরেকটু ভেতর থেকে ভাবতে বলবো। ইউসূফ আঃ মূলত জ্ঞান ব্যবহার করেছেন। আল্লাহ যে জ্ঞান তাঁকে দিয়েছিলেন, সেটাকে সঠিক সময়ে, সঠিক জায়গায়, সঠিকভাবে ব্যবহার করেছিলেন। 

খেয়াল করে দেখেন, এখানে কোন বলপ্রয়োগ নেই, ঘুষ নেই, অস্ত্রের ব্যবহার নেই, জাস্ট জ্ঞানের যথাযথ ব্যবহার। 

 

এবার জানা যাক, আমাদের জীবনে বিষয়টা কীভাবে প্রয়োগ করবো? 

প্রথম কথা হচ্ছে, জ্ঞান কোন ফেলনা জিনিস নয়। তারমানে আমাদেরকে জ্ঞান অর্জন করতে হবে, সঠিক জ্ঞান। অনেকেই বলবে, আমাদের সমাজে অনেক জ্ঞানী মানুষ আছে, তাদেরকে কেউ পাত্তা দেয় না। তাদেরকে বলবো, শুধু জ্ঞান অর্জন করলেই হবে না। বরং ইউসূফ আঃ এর এই ঘটনার বিশ্লেষণ করলেই এর উত্তর পেয়ে যাবেন। 

ইউসূফ আঃ প্রথমজনকে তার মনিবের সাথে নিজের ব্যাপারে আলাপ করতে বলেছিলেন। এটাকে যদি আমরা মার্কেটিং হিসেবে দেখি, প্রচারণা হিসেবে দেখি তাহলে রিলেইট করতে পারবেন। তিনি মনিবকেই বলতে বলেছেন, বাজারে, নগরে বন্দরে গিয়ে জানাতে বলেন নি। তারমানে সঠিক জায়গাতে আলাপ করতে বলেছেন যেন রেজাল্ট পাওয়া যায়। কিন্তু সেই লোক তো আলাপ করতে ভুলে গিয়েছিলো, মানে মার্কেটিং প্রথমবার কাজে লাগেনি। 

সেই লোকই আবার পরবর্তীতে বাদশাহর স্বপ্নের ব্যাপারে দেখা করতে এসেছিলো। এখান থেকে বোঝা যায়, যে লোক প্রথমবার সেবা নিয়েছিলো, সে তখন প্রচারণাটা না করলেও, পরবর্তীতে সে-ই প্রথম তাঁর কথা মনে করে, এবং আরও বড় ক্ল্যায়েন্ট নিয়ে হাজির হয়।  

এই পয়েন্টকে যদি এভাবে দেখি যে, আমার প্রোডাক্ট যদি অথেনটিক হয়, সঠিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে ঠিকঠাক মার্কেট টার্গেট করে যদি সেলস পিচ করি, তাহলে তাৎক্ষনিকভাবে সেল জেনারেট না হলেও, কোন এক সময়ে ঠিকই ভালো রেজাল্ট পাওয়া যাবে, কারণ- প্রোডাক্ট অথেনটিক, সঠিক টার্গেট, যথাযথ পিচিং। এই পুরো লাইনটাই কিন্তু জ্ঞানের ব্যাপার। 

অথেনটিক প্রোডাক্ট, প্রোডাক্ট নলেজ, সঠিক কাস্টমারকে টার্গেট করা, যথাযথভাবে উপস্থাপন করা, প্রত্যেকটি ধাপের জন্যই আপনাকে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। 

 

হযরত ইউসূফ আঃ এর জীবনের এই ঘটনাকে অনেকভাবেই হয়তো ভাবা যেতে পারে। তবে আমি শুধু নিজের জীবনের সাথে কীভাবে এই ঘটনাকে শিক্ষা হিসেবে কাজে লাগানো যেতে পারে সেটা ভেবেই এটা লিখলাম। 

Scroll to Top